ꠎꠄ ꠇꠟ꠬ꠟꠣꠘ

আজ তোমাদের একজন মায়াবতী ও ঝড়ের গল্প শোনাব,
সে অনেক বছর আগের কথা, এক ভরা পূর্ণিমা রাতে আমি আর সে এক নদীর ধারে বসে গল্প করছি।
গল্প করছি বলাটা ভুল হবে, পূর্ণিমায় জলে জোয়ার আসে, সে জোয়ারের জলে চাঁদ ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিক।
তার মুখে জলের তরঙ্গ, আমি সেই তরঙ্গে নৌকা বাইছি আর তার গল্প শুনছি।
আমার গল্প জুড়ে যেমন তার কথা বলছি, তেমনি তার গল্প জুড়ে ছিল স্বর্গীয় দাদা ঠাকুর। আমার খুব মনে আছে সে বলছিল রোজ রাতে দাদা তার সাথে দেখা করেন, অথচ দাদার সৎকারের দিন আমি ছিলাম। দূর থেকে দেখেছি, কাছে যাওয়ার মত অতটা ভাল তখনো বেসে উঠতে পারি নি।
আগেই বলেছি চারিদিক পূর্ণিমায় ভরপুর, কিন্তু হঠাৎ সব অন্ধকার হয়ে আসে। প্রচন্ড ঝড় শুরু হয়, যেন ঈস্রাফিলের সিঙ্গায় হুঙ্কার বেজে উঠেছে, এই বুঝি শেষ হলো দুনিয়ার সব খেলা।
তান্ডব শেষ হতে হতে সকাল হয়ে গেছে, ছিলাম নদীর ধারে এসে পড়েছি এক জন কোলাহলে। কিন্তু এই কোলাহলের ভিতর তাকে খুঁজে পাচ্ছি না, তন্নতন্ন খুঁজেও পাই নি আর।
তারপর গেছে অনেক বছর, কত শত নারীর ঠোঁটের হাসিতে বিক্রী করেছি হৃদয়ের জমিন, তা হিসেব করে বলা যাবে না; দুনিয়ার নিয়মে ভুলে গেছি তাকে।
কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে মাঝ রাতে যখন জলের তেষ্টা পায়, ঘুমের ঘোরে জল চাইতেই সে ত্রিপয়া থেকে গ্লাসটা তুলে দেয়, আমি জল পান করে আবার শুয়ে পড়ি।
বা কখনো বই পড়তে পড়তে অগোছালো ভাবে ঘুমিয়ে গেলে সে ঠিকঠাক বালিশে মাথাটা পৌঁছে দেয়, চাদরটা গায়ে তুলে দেয়। আমি ঘুমের ঘোরেই তার হাতের স্পর্শ টের পাই, নিশ্বাস এসে কানে সুড়সুড়ি দেয়।
তারপর ঠিক রাত তিনটায়, সেই রাতের দুঃস্বপ্নে ঘুম ভাঙ্গে। আমার স্পষ্ট মনে আছে সে রাতের ঝড়টা শুরু হয়েছিল ঠিক তিনটায়, পরে জেনেছি সেদিনের ইত্তেফাকের ৪ নম্বর পাতার প্রথম কলামে।
হাতড়ে চশমাটা ঠিক ত্রিপয়ার উপর পাই, অথচ ঘুমাবার সময় আমি পাশের বালিশের উপর রেখেছিলাম ওটাকে, জলের গ্লাসটাও ঠিকঠাক শুণ্য।
আজকাল আমি অনেকটা দ্রুত শুয়ে পড়ি, যদি তারে আরেকটু কাছে পাই!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *