ꠎꠄ ꠇꠟ꠬ꠟꠣꠘ

গালিব যখন স্বর্গে যেতে অস্বীকার করলেন, ঈশ্বর রেগে গিয়ে একজন অপ্সরীকে বললেন এটাকে নরকে ফেলে রেখে আসো।
গালিব পরক্ষনেই আবিষ্কার করলেন খুবই শীতল একটা জায়গায়, নিজের পরনে বস্ত্র বলতে একখানা নেংটি।
মৃত্যুর পূর্বে ব্রিটিশদের অধীনস্থ ছিলো ভারতবর্ষ, সেই সুবাদে অল্প-স্বল্প ইংরেজ ভাষা শিখেছিলেন গালিব। কোন এক বন্ধুকেও পরামর্শ দিয়েছিলেন ছেলেকে ইংরেজি শেখানোর। সামনে একটা ইংরেজি সাইনবোর্ড দেখলেন জ্বলছে-নিভছে, সেখানে কী যেন একটা গণনা করা হচ্ছে। গালিব বুঝতে পারলেন নরকে এখন ২০২০ সাল আর এখানকার দাপ্তরিক ভাষা ইংরেজী, সম্ভবত বেশীরভাগ নরকবাসী ইংরেজ হওয়ায় এই ব্যবস্থা।
ভালো করে খেয়াল করে বুঝলেন নরকের এই অংশের নাম উগান্ডা, কিছু কিছু সাইনবোর্ডে উগান্ডার ভাষায়ও লেখা রয়েছে।
দেখতে দেখতে চারিদিক আলোকিত হতে শুরু করলো, গালিব দেখলেন যেভাবে ধর্মগ্রন্থগুলোতে বলা হয়েছিলো, তেমনই শীতের পর এবার গনগনে সূর্যের তাপে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে। গালিবের কাছে নরকের সূ্র্য্যকে পৃথিবীর সূর্য্যের চেয়ে অতোটা কঠিন মনে হয় নি, বরং শুরুর দিকে বেশ ভালোই লেগেছিলো।
কিন্তু গালিব খুব অবাক হলেন, তাঁকে এমন স্পেশাল নরকে কেন পাঠানো হলো, আশেপাশে তো খুব একটা নরকবাসী নেই। পথের কিনারায় যাও দু-চার জনকে দেখা যাচ্ছে, তাদের গায়ে জ্বরাজীর্ণ কাপড়-চোপড় দেখা যাচ্ছে। গালিবের ধারণা ছিলো নরকে সবাই উলঙ্গ থাকবে, সূর্য্যের তাপে তো কাপড় থাকলেও তা গলে যাওয়ার কথা।
হুট করে গালিব বিশাল একটা শব্দে চমকে উঠে তাকিয়ে দেখলেন সামনে কী যেন একটা প্রচন্ড গতিতে ছুটে আসছে। ভালো করে খেয়াল করে দেখলেন এ তো ব্রিটিশ রেল! সামনে বড় করে ব্রিটিশ রেলওয়ের নামের আদ্যাক্ষর লেখা “BR”, আরো ভালো করে তাকিয়ে দেখলেন তিনি রেলওয়ের উপর দাঁড়িয়ে আছেন। ক্ষনিকের জন্য রেল চাপা পড়েন নাই। ব্রিটিশদের কথা চিন্তা করে অবাক হয়ে গেলেন, হারামিগুলো নরকেও এতো কিছুর ব্যবস্থা করে ফেলেছে!
হাঁটতে হাঁটতে এক অপ্সরীর সাথে দেখা, অপ্সরী হুদাই বাগিচায় দৌঁড়-ঝাপ করছে, দূরে আরো জনা কয়েক অপ্সরী-গিলমান চক্রাকারে দৌঁড়াচ্ছে।কোন কিছু বুঝতে পারছে না গালিব, নরকে তো বাগিচা থাকার কথা না! তাহলে কী নরকের অপ্সরী আর গিলমানদের জন্য বাগিচার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে? বিষয়টা বুঝতে গালিব অপ্সরীকে জিজ্ঞেস করলেন “তুম লোগ কিয়া করতা হায়?”।
অপ্সরী তো রেগে মেগে আগুন হয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে দিলো। পাকি, জামাত, শিবির আরো কী সব বলছে গালিব তার তেমন কিছুই বুঝলেন না। অপ্সরী এক সময় চিৎকার করে বাকীদের ডেকে বললেন পাকড়াও উছকো, ইয়ে পাকিকো পাকড়ো। এবার গালিব বুঝলেন কপালে বিপদ, দৌঁড় লাগাতে হবে।
পিছন থেকে শুনতে পেলেন দূর থেকে দৌঁড়ে আসা বাকী অপ্সরী-গিলমানেরা বলছে হোয়াট হ্যাপেন্ড খুশী আপা! হোয়াট দ্যাট ম্যাড হ্যাভ ডান? এর অর্থ কী তা বোঝার চেয়ে দৌঁড়ানোই ভালো মনে করে গালিব দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে পড়লেন আরেক অপ্সরীর সামনে।
এই অপ্সরীার সাথে আবার হরেক রঙ এর পোষাক পরা অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত কিছু গিলমান।
গালিবকে থামিয়ে অপ্সরী বললেন- কী হে পাগলা, তোর মাস্ক কই? আর এই লকডাউনে বাইরে বের হইছিস ক্যান?
দে, ১০ হাজার টাকা জরিমানা দে।
গালিবের তো মাথায় হাত!
প্রথমতঃ জরিমানার টাকা কই পাবো! মরার আগে ভারত দখল করে নিলো ব্রিটিশরা, নিঃস্ব-অসহায় অবস্থায় যেখানে মারা গেলাম সেখানে ১০ হাজার টাকা সঙ্গে থাকার তো প্রশ্নই ওঠে না! আর যদি নবাবী আমলেও মারা যেতাম, ঈশ্বরের নিয়ম মানতে গিয়ে তো সেই শুন্য হাতেই কবরে ঢুকতাম, তাহলে এই নরকে জরিমানার ব্যবস্থা করেছে কোন আহাম্মক?
স্বয়ং ঈশ্বর! নাকি নরকও পুরোপুরি বৃটিশরা দখল করে নিয়েছে? যদি বৃটিশরা দখল করে নিয়ে থাকে, তাহলে মীরজাফরি করলো কোন কোন ফেরেস্তা?
দ্বিতীয়তঃ লকডাউন বা মাস্ক কী জিনিস!
গালিবের ভাবনায় বাঁধা দিয়ে এক গিলমান বলে উঠলো, ম্যাম, ওর সাথে তো কিছুই নাই, দেখছেন না একটা নেংটি পরে আছে! ও টাকা দিবে কিভাবে?
অপ্সরী গালিবের দিকে ভালো করে খেয়াল করে খচখচ করে কী যেন লিখলেন হাতের খাতায়।

————-
তার ১ বছর পরের ঘটনাঃ
————-
এক বছর নারকীয় জেল খাটার পর ছাড়া পেয়ে যখন গালিব জেল গেট থেকে বের হচ্ছে, ঠিক তখনই আবার ঐ অপ্সরীর সাথে দেখা। অপ্সরী গালিবকে বললেন- কী রে পাগলা, এই শাটডাউনে বাইরে বের হইছিস ক্যান? আর বাহির হইছিস ভালো কথা, কিন্তু মাস্ক কই?
গালিব চিৎকার করে বললো- হে ঈশ্বর, আমার ষোড়শী প্রেমিকা চাই না, তোমার ঐ কোটি কোটি বছর বয়সী অপ্সরীই সই, দয়া করে আমাকে এই নরক থেকে স্বর্গে স্থানান্তরিত করো। আর যদি নরকেই রাখো তাহলে দয়াকরে রক্ষীদের বলো তারা আগুনে পোড়াক বা বরফে চুবাক, দয়া করে যেন ডিম দেয় না, কোনও ধর্মগ্রন্থে তো তুমি ডিম দেয়ার কথা বলো নাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *