গত বছরের ঘটনা বোধহয়, পারফিউম কিনতে একটা দোকানে ঢুকলাম। আনুমানিক কলেজ পড়ুয়া একটা মেয়ে আর তার ছোট বোন দোকানটা চালাচ্ছে, আমি পারফিউম চাইতে ছোট বোনটাকে বললো তার বাবাকে ডেকে আনতে (রাস্তার পাশে বাড়ী, ঘর লাগোয়া দোকান), খানিকবাদে বাবা না এসে মা এলেন, কিছু ডিউডোরেন্ট বের করে দিলে আমি পারফিউম চাইলাম।
ভদ্রলোক ভিতরে চা খাচ্ছেন, কিছুক্ষন পর আসার পর আমাকে পারফিউম দিলেন, দরদাম মিটিয়ে আমি কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলাম।
ভদ্রলোক জানতে চাইলেন আমি আর কিছু নিব কিনা, আমি বললাম-
না, আর কিছু নেব না, তবে আপনাকে আমার একটা কথা বলার ছিল, কিন্তু আপনি কিভাবে নিবেন বুঝতে সময় নিচ্ছি।
লোকটা উৎসুক মনে জিজ্ঞেস করলেন কী কথা বলতে চাই, তিনি শুনতে চান।
আমি জিজ্ঞেস করলাম- এ’দুটোই তো আপনার মেয়ে, নাহ?
– হ্যাঁ।
আমি – বড় মেয়েটাকে আপনার খারাপ লাগে? মেরে ফেলতে ইচ্ছা হয়?
– কেন?
– আপনারা ৩ জনই ফর্সা, বড় মেয়েটা শ্যামলা, মনে হয় না সে আপনার জন্য বোঝা?
– বোঝা হতে যাবে কেন? সন্তান সাদা হোক, কালো হোক, সে সন্তান। সাদা-কালো দিয়ে মানুষ বিচার করা যায় না, আর সন্তান হলে তো প্রশ্নই ওঠে না।
আমি – তাহলে এই রঙ ফর্সাকারী ক্রিমগুলো দোকান থেকে নামিয়ে ফেলুন, আপনি হয়তো খেয়াল করেন নি কখনো, এই ক্রিমগুলো আপনার মেয়ের দিকে তাকিয়ে টিটকারী করে বলে “তুই কালো, তুই কালো।”
নিজে আপনাদের চেয়ে কালো বলে হয়তো আয়নায় দাঁড়িয়ে লুকিয়ে কাঁদে, আপনি হয়তো তা কখনো জানতেও পারবেন না।
সাদা-কালো যদি মানুষকে বিচারের বিষয় না হয়ে থাকে তবে সাদা হওয়ার জন্য কোন ক্রিম থাকা অন্যায়।
কথাগুলো শেষ করে আমি তাকে কিছু বলতে না দিয়ে হনহন করে চলে এসেছি, বেশ কিছুদিন পর আমার এক বন্ধুকে পাঠিয়েছিলাম, বন্ধু আমার গিয়ে ফেয়ারনেস ক্রিম চাইলে লোকটা একটা তাক এর দিকে ইশারা করলেন, সেখানে একটা স্টিকার লাগানো-
“এখানে রঙ ফর্সাকারী ক্রিম বিক্রয় হয় না। মানুষকে ভালবাসুন, গায়ের রঙ নয়।”